৩০ হাজার টাকায় কম্পিউটার বায়িং গাইড
আমাদের ডেস্কটপ বায়িং গাইডে আপনাকে স্বাগতম। আগের আর্টিকেলে ২০ হাজার টাকায় কিভাবে একটি এন্ট্রি লেভেল গেমিং সিপিইউ টাওয়ার বিল্ড করতে হয় তা দেখানো হয়েছিল।
আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের দেখাব কিভাবে ৩০ হাজার টাকায় বাজেট গেমিং পিসি বিল্ড করতে হয়। বিল্ডটি সম্পূর্ণই বেস্ট ভ্যালু ফর মানি এর কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে।
এই বিল্ড দিয়ে আপনি বর্তমান সময়ের লেটেস্ট গেমগুলো ১০৮০ পিক্সেলে লো অথবা মিডিয়াম প্রিসেটে এভারেজ ৩০ ফ্রেম রেটে খেলতে পারবেন এবং কমবেশি সব গেমসই ভালো ফ্রেম রেটে ৭২০পি এবং ৯০০পি-তে খেলতে পারবেন।
বিশেষ করে ইস্পোর্টস টাইটালের গেমগুলো বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে খেলা যাবে। গেমিং ছাড়াও এই বিল্ড এর সাহায্যে ভিডিও এডিটিং বা ফটো এডিটিং সহ দৈনন্দিন জীবনের যাবতীয় সকল কাজই করা যাবে।
বিঃদ্রঃ আর্টিকেলে উল্লেখিত কম্পোন্যান্টগুলোর দাম যেকোনো সময় পরিবর্তিত হতে পারে কিংবা কোনো স্টোর বা আবস্থান ভেদে দাম কমবেশি হতে পারে, তাই কেনার আগে এই বিষয়ে ভালোভাবে খুঁজ খবর নিয়ে নিবেন।
আরো পড়ুনঃ
৩০ হাজার টাকায় বাজেট গেমিং পিসি বায়িং গাইড ২০২০
প্রসেসর
ডেস্কটপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি কম্পোন্যান্ট হলো প্রসেসর। তাই যেকোন পিসি বিল্ড করার ক্ষেত্রে এই বিষয়ে সবদিক বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।বর্তমানে প্রসেসর বাজারে দীর্ঘদিন ধরে ইন্টেল এবং এএমডি একে অপরের প্রতিযোগিতা করছে। অনেকের মতে প্রসেসরের ক্ষেত্রে ইন্টেল বেস্ট, আবার অনেকের মতে এএমডি বেস্ট। সত্যি বলতে এই দুটি কোম্পানিই বেস্ট তাদের দিক থেকে।
তবে যখন কথা আসে বাজেট পিসি বিল্ড নিয়ে তখন এদিক থেকে কিন্ত এএমডি এগিয়ে রয়েছে। কেননা এমডি কম দামে বেশ ভালো মানের পাওয়ারফুল প্রসেসর অফার করছে।
বর্তমানে APU নামে একটি কথা বেশ প্রচলিত। নাম শুনে থাকবেন হয়তো। ২০১১ সালে এএমডিই প্রথম এই APU বাজারে ছাড়ে।
APU এর পূর্ণরূপ হলো Accelerated Processing Unit। এটি মূলত CPU (Central Processing Unit) এবং GPU (Graphics Processing Unit) এর সমন্বয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে।
অর্থাৎ প্রসেসরেই গ্রাফিক্স ইনক্লুড করা থাকে। এখন, আপনি প্রশ্ন করতে পারেন যে ইন্টেল প্রসেসরও তো ইন্টেল এইচডি, আল্ট্র এইচডি নামে ইন্টারনাল গ্রাফিক্স ইনক্লুড করা থাকে, তাই না?
এই প্রশ্নের জবাবে আমি আপনাকে বলবো, অব্যশই ইন্টেলের প্রসেসরগুলোতেও গ্রাফিক্স ইনক্লুড করা থাকে। তবে সেগুলো APU তে থাকা গ্রাফিক্স এর তুলনায় কম শক্তিশালী হয়ে থাকে।
ফলে ইন্টেলের এইচডি সিরিজের গ্রাফিক্সগুলো ততোটা শক্তিশালী না হওয়ায় আপনি এর সাহায্যে গেমিং করতে পারবেন না। গেমিং করতে হলে আপনাকে অব্যশই একটি ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড কিনতে হবে।
কিন্ত আপনি এএমডির এই APU এর সাহায্যে নির্দ্বিধায় গ্রাফিক্স কার্ড ছাড়াই মোটামুটি ভালো ফ্রেম রেটে গেমিং করতে পারবেন। তাছাড়া পরবর্তীতে ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড লাগানোর অপশন তো থাকছেই।
আপনার বাজেট কম কিন্তু আপনি পিসিতে গেমিং করতে আগ্রহী, তাহলে আপনি চোখ বন্ধ করে এএমডির এপিইউগুলোর মধ্যে একটি কিনে পিসিতে গেমিং করা শুরু করে দিতে পারেন।
আমাদের বাজেট যেহেতু ৩০ হাজার টাকা সেহেতু এই বিল্ডে প্রসেসর হিসেবে আমরা এএমডির APU-ই ব্যবহার করবো। বিল্ডটিতে আমরা এএমডির Ryzen 5 3400G APU হিসেবে সিলেক্ট করেছি। এটি বাজেটর মধ্যে বেশ শক্তিশালী একটি APU। এর দাম ১৩ হাজার ৬০০ টাকা।
এই APU-তে থাকছে ৪টি কোর এবং ৮টি থ্রেড। এর বেইজ ক্লক ৩.৭ গিগাহার্টজ যা ৪.২ গিগাহার্টজ পর্যন্ত বুস্ট করা যাবে।
এএমডির এই APU-তে আরো থাকছে রেডিয়ন ভেগা ১১ গ্রাফিক্স, যার বেইজ ফ্রিকুয়েন্সি ১৪০০ মেগাহার্টজ। এটি রাইজেন ৩ ৩২০০জি এপিইউতে ব্যবহৃত রেডিয়ন ভেগা ৮ হতে ওভারঅল ৬৯% বেশি ফাস্ট এবং এনভিডিয়া জিটি ১০৩০ জিপিইউ থেকেও এটি অনেক এগিয়ে রয়েছে।
মাদারবোর্ড
বিল্ডটিতে মাদারবোর্ড হিসেবে আমাদের রিকমেন্ড থাকবে Gigabyte B450M S2H ULTRA Durable মাইক্রো এটিএক্স বোর্ড। এটি ওভার ক্লকিং সমর্থিত একটি মাদারবোর্ড। তাই আপনি চাইলে ওভার ক্লকিং করে গেমিং পারফরম্যান্স বুস্ট করতে পারবেন।এএমডির B450 চিপসেটের এই মাদারবোর্ডটিতে রয়েছে ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত ডুয়াল চ্যানেল ডিডিআর ৪ র্যাম ব্যবহারের সুবিধা, ইউএসবি ৩.১ পোর্ট, এম.২ স্লট ইত্যাদি। এর দাম পড়বে ৬ হাজার ১০০ টাকা।
র্যাম
র্যামের ক্ষেত্রে বাস স্পিড যত বেশি হবে পার্ফরমেন্সও তত বেশি পাওয়া যাবে। বিশেষ করে এএমডি’র রাইজেন আর্কিটেকচারের প্রসেসর সম্পন্ন পিসিতে বেশি বাস স্পিডের মেমোরি থাকলে পারফর্মেন্স আরো বেশি পাওয়া পায়।আর যেহেতু আমাদের বিল্ড APU ভিত্তিক তাই ভালো পারফরম্যান্সের জন্য অবশ্যই ডুয়াল চ্যানেল কনফিগারেশনের র্যাম ব্যবহার করতে হবে। ডুয়াল চ্যানেল কনফিগারেশনের র্যাম ব্যবহার না করলে পারফরম্যান্স ১০-৩০% পর্যন্ত ড্রপ করতে পারে।
এই বিল্ডে আমরা র্যাম হিসেবে সিলেক্ট করেছি Geil Evo Spear ২x৪ গিগাবাইট ডিডিআর৪ ডুয়াল কিট। একেকটির দাম পড়বে ২ হাজার ৩০০ টাকা করে।
এর বাস স্পীড হলো ২৬৬৬ মেগাহার্টজ। বিল্ডটিতে আমরা ২৬৬৬ মেগাহার্টজ বাস স্পীডের র্যাম ব্যবহার করেছি। এএমডির এই APU সর্বোচ্চ ২৯৩৩ মেগাহার্টজ বাস স্পীডের র্যাম সমর্থন করে। আপনি চাইলে আরো বেশি বাস স্পীডের র্যাম নিতে পারেন।
স্টোরেজ
বিল্ডটিতে স্টোরেজ হিসবে আমাদের পছন্দ COLORFUL CN500 ২৪০ গিগাবাইট এম.২ এসএসডি ড্রাইভ। এর দাম ৩ হাজার ২০০ টাকা।এখন আপনি যদি এসএসডি ড্রাইভ এর পরিবর্তে এইচডিডি ড্রাইভ নিতে চান, অর্থাৎ আপনার স্টোরেজের প্রয়োজন যদি খুব বেশি হয়ে থাকে তাহলে আমাদের রিকমেন্ড থাকবে ১ টেরাবাইটের Seagate Barracuda। এর দাম পড়বে ৩ হাজার ৭০০ টাকা।
আসলে সিস্টেমে একটি এসএসডি ড্রাইভ থাকলে পারফর্মেন্স আরো কয়েক গুণ বেড়ে যায়। মূলত পারফর্মেন্সের কথা মাথায় রেখেই এসএসডি ড্রাইভ নেয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভালো হয় যদি সিস্টেমে একটি এইচডিডি ও এসএসডি ড্রাইভ থাকে।
পাওয়ার সাপ্লাই
পাওয়ার সাপ্লাই কেনার ক্ষেত্রে সবসময় ব্রান্ডের পাওয়ার সাপ্লাইগুলো কেনা উচিত। এই বিল্ডে পাওয়ার সাপ্লাই হিসেবে থাকছে Antec Atom 550W। ৫৫০ ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পাওয়ার সাপ্লাইটি বাজেটের মধ্যে থাকা অন অফ দ্যা বেস্ট পাওয়ার সাপ্লাই।পাওয়ার সাপ্লাইটি ৫৫০ ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন হওয়ায় ভবিষ্যতে পিসি আপগ্রেড করলেও কোন সমস্যা হবে না। পাওয়ার সাপ্লাইটির দাম ২ হাজার ৬০০ টাকা।
কেসিং
কেসিং কোনটা নিবেন সেটা সম্পূর্ণই আপনার রুচির উপর নির্ভর করে। আমরা বিল্ডটিতে কেসিং হিসেবে সিলেক্ট করেছি DELUX DLC-DW701। কেসিংটি দেখতে প্রিমিয়াম লুকিং এর না হলেও এতে কাজ হয়ে যাবে। কেসিংটির দাম পড়বে ১ হাজার ৪৫০ টাকা।বিল্ডের সমস্ত কম্পোন্যান্টের মূল্য নিম্নে তুলে ধরা হলো:
- প্রসেসর – ১৩,৬০০ টাকা
- মাদারবোর্ড – ৬,১০০ টাকা
- র্যাম – ৪,৬০০ টাকা
- স্টোরেজ – ৩,২০০ টাকা
- পাওয়ার সাপ্লাই – ২,৬০০ টাকা
- কেসিং – ১,৪৫০ টাকা
- মোট মূল্য – ৩১,৫৫০ টাকা
বেঞ্চমার্ক
নিচে আমাদের বিল্ডে ব্যবহৃত সিপিইউ এর বেঞ্চমার্ক তুলে ধরা হলো:- Cinebench R20 – ৪৪২ (সিঙ্গেল-কোর); ১৯৬৯ (মাল্টি-কোর)
- Cinebench R15 – ১৬৯ (সিঙ্গেল-কোর); ৮৭৫ (মাল্টি-কোর)
- Geekbench 5 – ৯৪০ (সিঙ্গেল-কোর); ৩,৬৬০ (মাল্টি-কোর)
- Temperature – ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস (Idle); ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (গেমিং)
আমাদের এই বিল্ড দিয়ে ১০৮০পি, ৭২০পি এবং ৯০০পি এ বর্তমান সময়ের গেমগুলো মোটামুটি ভালো ফ্রেম রেটে খেলা যাবে। আমাদের এই বিল্ড হতে কেমন গেমিং পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে তার কিছু উদাহরণ নিম্নে তুলে ধরা হলো:
১০৮০পি (লো সেটিংস) —
- Tom Clancy's Rainbow Six Siege – ৮৩ FPS (এভারেজ)
- World War Z – ৮৩ FPS (এভারেজ)
- Fortnite – ৮১ FPS (এভারেজ)
- Far Cry New Dawn – ৩০ FPS (এভারেজ)
- Strange Brigade – ৪৫ FPS (এভারেজ)
- F1 2019 – ৫২ FPS (এভারেজ)
- World of Tanks – ১৯৮ FPS (এভারেজ)
মতামত
এই ছিলো ৩০ হাজার টাকায় বাজেট গেমিং পিসি বায়িং গাইড। বিল্ডটিতে আমরা বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ভালো কম্পোন্যান্টগুলো এড করার চেষ্টা করেছি।আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলে কোন রূপ ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং বিল্ড সম্পর্কে কোনো ধরণের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।
No comments